সম্প্রতি

শান্তিতে ঘুমাও হে সূর্যদয়ের কবি, কিনব্রীজের কবি দিলওয়ার

আনোয়ারুল ইসলাম অভি

সুরমার বুক ছোঁয়ে স্বপ্নগুলো পাল তোলে দুইশ পঁচিশ নদী

মোহনায় যায় অন্যসব

তুমি দিব্যি চলো আলোর ডিঙি নিয়ে

নাড়িপোতা সিলেটে বোধের শিকড় ছেড়েছ অজ¯্র

দৃষ্টির ভেতরে জাগা মনভূমি বন্ধুর ,দুর্বোদ্ব নয়।

দিনে দিনে তুমি মহাকালের পথে

অগণন মানুষ ভালোবেসে নাম দিয়েছে গণমানুষ

সুরমা থেকে টেমস

নোঙগর তুলা মানুষগুলো বীজবুনে

প্রতিবাদ,বিÿুভ ভালোবাসায়

কবি হতে প্রাণান্ত সাধনায় কবিয়াল

দিন থেকে আলোর দিন প্রতিদিন

মানুষে মানুষ শুদ্ধচারণ নির্মাণে নিরন্তন তুমি

ÿমা করো -তোমার আদর্শ নিহারীকায়

আজও যোদ্বা হতে পারিনি।

NEWS PAPER 01

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, একুশে পদক প্রাপ্ত, সর্বপরি গণমানুষের দেয়া পদক  ‘গণমানুষেরকবি’ দিলওয়ার আজ আর আমাদের মাঝে নেই। ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ২০১৩, তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। দেশ বিদেশে স্ফোরিত তার অসাধারণ মৌলিক কাজগুলো ও তার অনুকরণীয় দৈনন্দিন সামাজিক জীবন তাকে নিয়ে গেছে অন্যরকম উচ্চতায়।

গণমানুষেরকবি দিলওয়ার স্মরণে সংহতি সাহিত্য পরিষদ আয়োজন করে  কবি দিলওয়ার স্বরণ অনুষ্টান।২৮ অক্টোবর সোমবার পূর্বলন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে অনুষ্টিত স্বরণ অনুষ্টানে কবি, ছড়াকার,লেখক,সংস্কৃতিকর্মী, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিত ছিল উল্লেখযোগ্য।

সংহতি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল এর স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠান শুরু হয়।বৈরী আবহাওয়া উপেÿা করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- লেখক মাসুদ আহমেদ,কবি গোলাম কবির,সাংবাদিক ইসহাক কাজল,সংগঠক ও গীতিকবি আশরাফ নেছওয়ার,কবি ফারুক আহমেদ রনি,কবি মজিবুল হক মনি,ছড়াকার দিলু নাসের, লেখক ফাহমিদা মনজু মজিদ, কবি সামছুল হক এহিয়া, সাংবাদিক সাঈম চৌধুরী, কবি তুহীন চৌধুরী,সংস্কৃতিকর্মী রুবি হক, সংস্কৃতিকর্মী নাজমিন হক,কবি এম মোসাহিদ খাঁন,কবি আবির ইসলাম,কবি আরাফাত তামিম,সংস্কৃতিকর্মী আমিনা আলী,কবি সামসুল হক শাহ আলম, কবি নজরুল ইসলাম,কবি জামাল আহমেদ, কবি তারেক রানা, কবি মোহাম্মদ মুহিত প্রমুখ। প্রানবন্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সংহতি সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য সম্পাদক কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি।

সদ্যপ্রয়াত কবি দিলওয়ার এর কবিতা আবৃত্তি,কবিকে নিবেদিত স্বরচিত কবিতা পাঠ,স্মৃতিচারণ এবং কবির মৌলিক কর্ম  নিয়ে আলোচনায় অনুষ্ঠানটি ছিল কবি  দিলওয়ারময়। স্মৃতি চারণে উঠে আসে কবির  সহজ সরল অসাধারণ জীবন,কবির অনন্য লেখনি শক্তি,অসাস্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা,নবীনদের অনুপ্রেরণায় সামনে এগিয়ে যাবার দীÿা দেবার সম্মোহনী ÿমতা,সর্বপরি মৌলিক কর্ম ও সামাজিক,রাজনৈতিক চিন্তাশৈলীর স¦ত:স্ফুর্ততা ইত্যাদি। এছাড়াও বহুদা গুনাবলীর স্মৃতি চারণে কবির মৌলিক কর্মের আলেখ্য বর্ণনায় উঠে এসেছে কিভাবে একজন কবি  তৃণমূল থেকে বোদ্ধামহল পর্যন্ত কবিসত্তায় নিজেকে ‘গণমানুষেরকবি’ এর স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।যা  শুধু বাংলাদেশ  নয়,গোটা বিশ্বে  নি:সন্দেহে বিরল।

কবিকে নিবেদিত পুরো অনুষ্ঠানটি তিন পর্বে সাজানো ছিল। কবি,গীতিকার মজিবুল হক মনির কÚে - কবি দিলওয়ার রচিত জনপ্রিয় গাণ মুরশিদ আমি খুজবোনা বনজঙ্গলে যাইয়া/আমার মাঝে আমার মুরশিদ আছে যে লুকাইয়া -দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান ।

প্রথম পর্বে কবিকে নিয়ে সাজানো নিবেদিত কবিতা আবৃত্তি করেন-কবি গোলাম কবির,কবি মজিবুল হক মনি, কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল,সংস্কৃতিকর্মী রুবি হক, কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি, কবি এম মুসাহিদ খান।স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন-কবি মোহাম্মদ মুহিত, কবি জামাল আহমেদ।

দ্বিতীয় পর্বে কবি দিলওয়ারের কবিতা পাঠ করেন ছড়াকার দিলু নাসের, কবি সামছুল হক এহিয়া, কবি সৈয়দা তুহিন চৌধুরী,কবি আবির ইসলাম।

তৃতীয় পর্বে  ছিল কবির প্রতি স্মৃতিচারণ।

সঞ্চালক কবি  আনোয়ারুল ইসলাম অভি-কবির প্রতি গভীর মমতায় বিলেতের কবি লেখক,সাংবাদিক,সাংস্কৃতিক কর্মীদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রতি স্বরণ অনুষ্ঠানের পÿ থেকে কৃতঙ্্গতা  প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে - ছড়াকার দিলু নাসের এর উপস্থাপনায় চ্যানেল নাইন এ বিশেষ অনুষ্ঠান, সাংবাদিক ইসহাক কাজল এর উদ্যোগে জনমত বিশেষ সাহিত্য সংখ্যা, কবি শামীম আজাদ এর উদ্যোগে বাংলা পোষ্ঠ এর  বিশেষ সাহিত্য সংখ্যা, কবি  আনোয়ারুল ইসলাম অভির উদ্যোগে বাংলা টাইমস এর বিশেষ সাহিত্য সংখ্যা, কবি ফারুক আহমেদ রনির উদ্যোগে আমাদের বাংলা বøগের বিশেষ সংখ্যা উলেøখযোগ্য। এছাড়াও সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ,কবি আহমদ ময়েজ,সাংবাদিক ও গল্পকার সাঈম চৌধুরী,কবি আহমেদ ফয়সাল এর  কবিকে নিয়ে সময় উপযোগী লেখা ও সংবাদ,প্রতিবেদন প্রকাশ এর উদ্যোগ বিলেতের লেখক,সাংস্কৃতিক কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করবে।

সংহতি সাহিত্য পরিষদ ও কবি নজরুল সেন্টার এর যৌথ উদ্যোগে- গণমানুষের এই কবির প্রতি নিখাদ ভালোবাসার তাগিদেই তার ৭০ তম জন্মদিন বিলেতের কবি,লেখক,সাংস্কৃতিক কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে সারম্ভে পালন করে। অগণন মানুষ যেখানে কবিকে গণমানুষ হিসাবে অভিষিক্ত করেছে, তার মৌলিক কর্মের প্রাচুর্যতার বিবেচনায় রাষ্ট্র যাকে একুশে পদক এ সম্মানীত করেছে,সেখানে বাংলাদেশের দুই-তিন জাতীয় পত্রিকা কবিকে ‘সিলেটেরকবি’ হিসাবে সংবাদ পরিবেশন, এমনকি একটি জাতীয়  পত্রিকা তাকে ‘নিহত’ হয়েছেন বলে সংবাদ পরিবেশন করেছে!

লেখক মাসুদ আহমদ: কবি দিলওয়ার অনেক কাছের মানুষ ছিলেন।তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কোন দিন বিলীন হবার নয়।আমার স্ত্রী অসুস্থ,তাকে বাসায় একা রেখে এসেছি,যদিও জানি এ অবস্থায় তাকে একা রেখে আসা উচিত নয়।আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার স্ত্রী আমাকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য জোর দিচ্ছেন।কবি দিলওয়ার আমার মতো তারও ভালোবাসার মানুষ ও কবি ছিলেন। কবি দিলওয়ার এর সাথে পরিচয় পর্বটি মধুর ছিল-৬০ এর দশকে আমি যখন সিলেট মেডিকেল কলেজের ছাত্র ,তখন ডাইজেষ্ট পত্রিকা বেরুতো। কবির একটি কবিতা আমার ডাইজেস্ট পত্রিকা- সৈকত এ  ছাপি।একদিন, চমকে দিয়ে তিনি আমার বাসায় হাজির। বললেন তুমি কবি মাসুদ আহমদ না? আমার কবিতা তোমার সৈকতে ছাপিয়েছ,তোমার সাথে দেখা করতে এলাম! এভাবেই কবির সাথে আমার সখ্যতা শুরু। কবির মেয়ে ফোন করতো,কবি আসতেন। অনেক নান্দনিক সময় কাটিয়েছি।একদিন শুনি, তিনি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন।আমি ঢাকায় যাই, তার সাথে মুগ্ধতায় দেখা করি, তিনি তার স্বভাব সুলভ আচরণে আমাকে আদর করলেন,লেখার প্রেরণা দিলেন।প্রচুর ভালোলাগা মূুহুর্ত ছিল সেদিন গুলোতে।

কবি দিলওয়ারের কবিতা নিয়ে প্রতিযশা কবিরা অনেক আলোচনা করেছেন, আমরা তার কবিতার  বহুমূখী মৌলিক দিক গুলো জানি।কবিতা নিয়ে এখানে কিছু বলতে চাইনা। তবে আমি যেটা বিশ্বাস করি, কবি দিলওয়ার একজন খুব উচুমানের কবি এবং উচুমানের মানবিক,সৃজনশীল মানুষ ছিলেন।

লেখক সাংবাদিক ইসহাক কাজল: কোথা থেকে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছিনা। ১৯৬৫ সালে মেট্রিক পাশ করে সিলেটে আসি।আমার কেউ নেই যে, সিলেটে নিয়ে আমাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করবে। আমিই পরিবারের প্রথম ব্যক্তি যে অÿর গ্ঞান এর প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনকারী ব্যক্তি। সিলেট পলিটেকনিকেল কলেজে ভর্তী হই। তারপর ডিপ্লোমা পাশ করে মদন মোহন কলেজে ভর্তী হই। আমার সহপাঠি ছিল কবি দিলওয়ার এর ভাতিজা। তার সূত্র ধরেই মুলত তার সাথে আমার পরিচয়।তারপর থেকে আমৃত্যু কবি দিলওয়ার ছিলেন আমার অভিবাবক।আজীবন নীরহংকারী,পরপোকারী,বিদ্রোহী,দ্রোহী এবং নিবেদিত মৌলিক শিÿক হিসাবে তার অবদান কেই ভূলবেনা।

মনে পড়ে, জীবনের প্রথম বাঁকে যখন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম, প্রিয় দিলু ভাই ছিলেন অভিবাবক-এই তুই কি করবি? । হয় রাজনীতি,নয় লেখক-আগে সিদ্ধান্ত নেয়। আজ গর্ব করে বলতে চাই, আজ যতটুকু হতে পেরেছি -সবই কবি দিলওয়ার এর জন্যে হতে পেরেছি। সিলেটে লেখক,কবি,ছড়াকার,প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন তৈরীতে কবি দিলওয়ার এর ভূমিকা অতুলনীয়।সুদিনে তার নিকট থেকে অনেকে নানা রকম সুবিধা নিলেও পরবর্তীতে এই সব লোকরাই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভূমিকা রেখেছেন।কবি দিলওয়ার ছাড়া আমাকে ভাবতে যেমন পারিনা,তেমনি আমি অপকটে স্বীকার করি যে,তার সাহায্য, অনুপ্রেরণা ছাড়া আমি ‘ইসহাক কাজল’ কখনও হতে পারতাম না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জানুয়ারী ২০১৪ এ

কবিকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করবো। কবি আমাদের মোমবাতি ছিলেন, আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখবো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে.......।

কবি ফারুক আহমেদ রনি: পৃথিবী স¦দেশ যার আমি স্বঙ্গী চিরদিন.....’ তার একটি লাইনের মধ্যেই বি¯Íর বিবরণ পাওয়া যায়।তাকে মামা বলে ডাকতাম।কবি, বিলেতের অন্যতম সংগঠক এবং কবি দিলওয়ার কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী আশরাফ নেছওয়ার এর মামা হোন। নেছওয়ার ভাই এর সাথে আমার বহু দিনের আতিœক সম্পর্ক।সে সুবাদে আমি কবিকে মামা বলে ডাকি। তিনিও আপন মমতায় আমাকে  গ্রহন করেছেন আমৃত্য।সংহতি  সাহিত্য পরিষদ গঠন হওয়ার আগে,শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা - শেøাগান নিয়ে সুরমা ইয়াং রাইটারস গ্রæপ আয়োজন করে সাহিত্য উৎসব।কবি দিলওয়ার ছিলেন সেই উৎসবের প্রধান অথিতি।

আজীবন প্রচার বিমূখ কবি দিলওয়ার এর কোন অহংকার ছিল না। মূল্যায়নের মাপকাটি বিবেচনায় নিলে নবীন,প্রবীন কবি অথবা লেখক হিসাবে তার মাঝে ভেদাবেদ কখনও দেখিনি।তার মাঝে অন্যরকম একটা মৌলিক অহং ছিল-তা হচ্ছে,আমি ঢাকায় যাবো না।আমি আমার শিকড় মাটি সিলেট থেকে লিখবো। আমি সিলেটের কবি। কবিতা লিখতে কি জন্ম মাটি ছাড়তে হয়?

তথাকথিত এবং অনভিপ্রেত অনেক বৈরী আচরণ তাকে অনেকটা অভিমানী করে তুলে ছিল।১৯৯৩ সালে সিলেটে কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি মহাদেব সাহা ও কবি দিলওয়ার কে সিলেটবাসীর পÿ থেকে সম্মাননা দেয়া হয়। কবিবিহীন সে সময়ের স্মৃতি গুলো এখনই আমাকে আকড়ে থাকতে হবে তা  ভাবতে কষ্ট হয়।

কবি দিলওয়ার ও কবিপুত্র কিশোওয়ার ইবনে দিলওয়ার সম্পর্ক আমার মনে হয় যারা দেখেছেন, কেবল তারাই বলতে পারবেন- আসলে সম্পর্কটা কি? এ এক অদ্ভুদ সম্পর্ক ও অদ্ভুদ অনুভূতি -প্রকাশ করা সম্ভব নয়....কিনব্রিজে রাতে  ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি।শেষ সময়ে একটা দূরত্ব হয়ে যায়,বহু দূর লন্ডনে থাকি, স¦ভাবতই একটা দূরত্ব হয়ে গেছে। কবির সাথে অনেক আতিœক সম্পর্ক আছে,দুই হাজার বারো সালে খ্বু অল্প সময়ের জন্য দেশে গিয়েছিলাম- তার সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি।  আসার আগে তাকে ফোন করে ছিলাম- তিনি ভরাট কÚে আমাকে  বলে ছিলেন-তুমি কেন আমাকে বলতে গেলা,তুমি এসেছিলে? কেনো ফোন করলা?

গীতিকার ও সংগঠক আশরাফ নেছওয়ার: কবিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবো কিছু দিন আগেও ভাবিনি।খুব কাছ থেকে কবিকে দেখার সুযোগ পেয়েছি।¯েœহের বাঁধনে ছিলাম বলে এতোদিন বুঝিনি- আসলেই তিনি কতো গভীরে ছিলেন!  আমরা অনেকে কাছে থেকে দেখেছি- সৃজনশীল,সুশীলদাবীদারগণ তার দূ:সময়ে  তাকে কত অবহেলা করেছেন।১৯৮৭ সালে লন্ডনে এসেছিলেন।হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাই হ্যালো বা শুভাকাঙ্খিদের আকাল হঠাৎ যেমন দেখেছি।তেমনি লেখক মাসুদ আহমদ,ডা: ইসলাম,কবি ফারুক আহমেদ রনির মতো নিবেদিত প্রাণ মানুষদেরও কবি দেখেছেন,চিনেছেন আপন বোধে। আনন্দে তার চোখে জল এসেছে।আমার মাকে তিনি বুবু বলে ডাকতেন।আবার আমাকে যখন আদর করতেন তখন ‘পুত্র’ বলে ডাকতেন! আমার কথা গুলোকে দয়া করে ব্যক্তি কথন হিসাবে নিবেন না।আসলে আমি কবি দিলওয়ারের ভেতরের মানবিকবোধ,সৃজনশক্তি ও জাগরণের দিক গুলো বুঝাতে চাইছি মাত্র।

জীবিকার জন্য তিনি মুদিদোকান দিয়ে ছিলেন।তিনি  ওজনে কাগজের ডুঙ্গা ব্যবহার করতে চাইতেন না। কারণ কাগজের ডুঙ্গা গুলো  অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করে! স্বাভাবিক ভাবেই দোকান বেশী দিন চলেনি। তার সততা, মানবিক মূল্যবোধ এর কারণে প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন অনেকবার অবঞ্গা করেছে।কিন্তু যা কিছু তিনি করেছেন সবই ছিল গনমানুষের জন্যে। ১৯৭৯ সালে সিলেটের মানুষ  তাকে গণসংবর্ধনার মাধ্যমে গণমানুষের কবি হিসাবে অভিষিক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধের সময় তিনি এলাকায় এলাকায় গিয়ে যুবকদের যুদ্ধে পাঠিয়েছেন।আমার জন্য খুবই কষ্ঠের যে,  পাসটেনস এ -আজ গণমানুষের এই কবিকে নিয়ে বলতে হচ্ছে।

ছড়াকার দিলু নাসের: তৃতীয় বিশ্বে অনেকেই কবিতা লেখেন। কিন্তু কবি দিলওয়ার ব্যতিক্রম।তাকে গণমানুষের কবি বলা হয়ে থাকে।দিলওয়ার ভাই যখন ভাষানীর জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য কবিতা লেখেন, তার সৌন্দর্য,মর্মপরশ -তখন তা আর কবিতা থাকেনা।কবিতা ছাড়িয়ে গণমানুষের ভালোবাসা প্রকাশের কথামালা হয়ে যায় ...। তিনি মরে গেছেন,তার কবিতা মরেনি। যতদিন বাঙালী,বাংলাভাষা থাকবে,তিনি বেঁচে থাকবেন।আমার মতো, অনেকেই তাকে ‘দিলু ভাই’ নামে ডাকতাম।একজন প্রাণের মানুষের সাথে দেখা করতে গিয়ে আরেক প্রাণের মানুষের সাথে দেখা হয়- কবিপুত্র, কবি কিশোওয়ার ইবনে দিলওয়ার  এর সাথে। বন্ধুত্বে ও কবিতায় আমরা আরো ঘনিষ্ঠ হই। কিনব্রিজ, আম্বরখানা, ভার্থখলা.....কত স্মৃতি, অনুভূতি।আমাকে মাফ করবেন, আমি আর বলতে পারছিনা।বাঙালীর উত্তরণের কবি,সূর্যদয়ের কবির প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা।

ছড়াকার দিলু নাসের কবির দুটি প্রিয় কবিতা -রক্তে আমার অনাদি অস্থি এবং কিনব্রিজ আবৃত্তি করলে স্বরণ অনুষ্ঠান হয়ে উঠে পুরোপুরি কবি দিলওয়ারময়।অনেকের চোখে কবিকে ঘিরে স্মৃতিজ্বলমল সিলেট এবং লন্ডনের স্মৃতিগুলো  অন্যরকম ভালোবাসারজল আনে।

কবি ফাহমিদা মঞ্জু:তার কবিতা আমাকে উদ্বোদ্ধ করে। একজন শক্তিমান কবি হিসাবে তিনি পাঠকের মাঝে বেঁচে থাকবেন চীরজীবন।কবি পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে কবির সাথে আতিœক সম্পর্কটা ছিল খুব মধুর।তার সাহিত্যই তাকে অমর রাখবে।

কবি সামসুল হক এহিয়া: সংহতি সাহিত্য পরিষদ  এর  নিয়মিত মৌলিক অনুষ্ঠান  সংহতি সাহিত্য আড্ডা কবির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। যেসব কথা আগেই বলা হয়েছে,সে সব আর পূনরাবৃত্তি না করে এইটুকু বলতে চাই যে, সংহতি অতীতের মতো ভবিষ্যতেও কবি দিলওয়ারের কর্ম ও জীবন নিয়ে অনুষ্ঠান ও নানামূখী উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। কবি দিলওয়ার সৃষ্টির আপন নিয়মে চলে গেলেও তার মৌলিক কর্ম,সৃজন ও মানবিক  আদর্শিক ভাবনা গুলোর সাথে  সংহতি সাহিত্য পরিষদের  আতিœক সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হবেনা।কারণ সংহতি সাহিত্য পরিষদ এসব বিষয় নিয়েই কাজ করে এবং সংহতির আদর্শিক ভাবনাও তাই।

কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল:  ছয় বা সাত বছর বয়েসে তাকে  আমি প্রথম দেখি- আমাদের গ্রামে।কথাসাহিত্যিক আকাদ্দস সিরাজ এর সাথে সম্ভবত তাদের ঘনিষ্ঠ  কবি-লেখকদের নিয়ে বর্ষা দেখতে বের হয়েছিলেন।দুইহাজার আট সালে সংহতি সাহিত্য পরিষদ কবিকে  কবিতা উৎসবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।কিন্তু শারিরীক অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তার অসাধারণ মৌলিক কর্মের প্রতি সম্মান জানাতে দশ মিনিটের একটি স্থিরচিত্র প্রদর্শণ করা হয়।এছাড়াও সিলেটের অকাল প্রয়াত কবি এবং কবিপুত্র কবি কিশোওয়ার ইবনে দিলওয়ারকে মরনোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়।

কবির সাথে শেষ দেখা- দুইহাজার বারো সালে। কুশল বিনিময়ের পর পরই জানতে চান লন্ডনের কবি লেখক শুভানুধ্যায়ীদের কথা।।আমাদের জন্য খুব দূ:খের যে, আজীবন শুভার্থী ও মৌলিক অভিবাবককে আমরা হারালাম। তার প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা।

স্বরণ অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে চা চক্র চলছে।  হল কর্তৃপÿের তাগাদায়  আমরা সংহতির ক’জন যখন সবকিছু গুছাতে ব্যা¯Í,অনুষ্ঠানের পোষ্ঠার খুলতে চোখ যায় কবির সেই অমলিন মমতাময় চোখে। গা ঝিম ধরে আমার,  ভয়ে সংকোচিত হই। বিধাতার সিদ্ধান্তে আমাদের অধিকার চর্চার ÿমতা স্বয়ং বিধাতাই রাখেননি। তবে তিনি সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি আমাদের জন্য রেখেছেন- আমরা তার কাছে অভিযোগ,অনুযোগ,প্রার্থনা জানাতে পারি! মনে হয়েছে চিৎকার করে জানতে চাই-আমার সোনার বাংলাদেশর ভালো মানুষ গুলোর এতো কম আয়ু দেও কেন হে প্রভূ? অথচ কাপুরুষ, খুনী,দেশদ্রোহী, রাজাকার বাঁচাও হচ্ছে মতো?

আমি কবির জন্য তৈরী নয় ফুট বাই চার ফুট সাইজের পোষ্টার রোল করি, আর কবি দিলওয়ার খুঁজি।কেন জানি চোখের পাতা  ঝাপসা ও ভারী হয়ে উঠে। স্মৃতিরা এসে ভর করে,আমি হাটি স্মৃতির মেঠোপথ....

দুই হাজার বারো সালে প্রিয় বাবা খুব অসুস্থ  সংবাদ জেনে পর দিনই তাকে দেখতে দেশে যাই....দিলওয়ার দাদুকে ফোন দেই। শক্তিমান লেখক সাংবাদিক আকাদ্দস সিরাজ এর সূত্র ধরে একদিন তিনিই বলেছিলেন অভি, তুমি আমাকে দাদু বলে ডাকবে! বাবার খবর শুনে বলেছিলেন-দাদু, তুমি বাবার কাছে থাকো,আর আমাকে হখল সময় ফোন দিয়া খবর জানাইও।

কানে বাজে লেখক মাসুদ আহমদ এর কথা - ‘তুমি কবি মাসুদ আহমদ না? আমার কবিতা তোমার সৈকতে ছাপিয়েছ,তোমার সাথে দেখা করতে এলাম!’

আশরাফ নেছওয়ার এর ভরাট কÚ -আমাকে যখন আদর করতেন তখন ‘পুত্র’ বলে ডাকতেন.....।

সাংবাদিক ইসহাক কাজলের উক্তি-এই তুই কি করবি? । হয় রাজনীতি,নয় লেখক-আগে সিদ্ধান্ত নেয়। দিলু নাসেরের  ভরাট কÚ-কিনব্রিজ, আম্বরখানা, ভার্থখলা.....কত স্মৃতি, অনুভূতি।আমাকে মাফ করবেন, আমি আর বলতে পারছিনা.....

ফারুক আহমেদ রনিকে বলা কবির সেই আকুতি-তুমি কেন আমাকে বলতে গেলা,তুমি এসেছিলে? কেনো ফোন করলা?

শান্তিতে ঘুমাও হে সূর্যদয়ের কবি,কিন ব্রিজের কবি।যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে,ততোদিন তুমি বেঁচে থাকবে....। বিন¤্র শ্রদ্ধা, অগণন ভালোবাসা।